ইসলামে নারী অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর।



প্রশ্নোত্তরে ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে ডা. জাকির নায়েকের অসাধারণ তথ্যবহুল উত্তর, যা আপনার চিন্তার খোরাক যোগাবে ইনশাআল্লাহ!  


১. প্রশ্নঃ আস্সালামু আলাইকুম, আমি সায়মা কাদরী এবং আমার প্রশ্ন, ইসলাম ধর্মে কোন নারী নবী আসেনি কেন?


ডা. জাকির নায়েকঃ বোন প্রশ্ন করেছেন, ইসলাম ধর্মে কেন নারী নবী আসেনি। যদি নবী বলতে আপনি এমন এক ব্যক্তি বোঝান যিনি আল্লাহর পক্ষ হতে বাণীপ্রাপ্ত হন এবং যিনি মানব জাতির নেতা হিসেবে কাজ করেন। সেই অর্থে এটা নিশ্চিত যে, ইসলামে আমরা কোন নারী নবী পাইনি। এবং আমি মনে করি এটি যথার্থ, কারণ যদি নারীকে নবী হতে হয় তবে সে সমাজের প্রধান হতে হবে কিন্তু কুরআনে স্পষ্ট করে বলা আছে পুরুষ হলো পরিবার প্রধান। সুতরাং যদি পুরুষ পরিবারের প্রধান হয় তবে কিভাবে নারী সমগ্র সমাজের নেতৃত্ব দিবে? দ্বিতীয়ত- একজন নবীকে নামাজের জামায়াতে ইমামতি করতে হয়। আগেই বলা হয়েছে নামাজের বেশ কিছু শারীরিক কসরত রয়েছে যেমন- কিয়াম, রুকু, সেজদা ইত্যাদি। যদি একজন নারী নবী নামাজে নেতৃত্ব দিত তবে জামায়াতের পিছনে যে সকল পুরুষ নামাজ পড়ে এবং ইমাম উভয়ের পক্ষে এটি বেশ বিব্রতকর।


আরো কিছু ব্যাপার রয়েছে। যেমন একজন নবীকে সর্বক্ষণ সকল সাধারণ মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে হয়, একজন মহিলা নবীর পক্ষে যেটা অসম্ভব। কারণ ইসলাম' নারী পুরুষ পরস্পরের মেলামেশার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।


যদি মহিলা নবী হতো এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সে যখন গর্ভবর্তী হতো, তখন তার পক্ষে কয়েক মাস নবুওয়াতের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা কোনভাবেই সম্ভব হতো না। এবং সন্তান জন্মের পর তার পক্ষে একই


সাথে সন্তান পালন করা এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করা কখনোই সম্ভব হবে না। কিন্তু একজন পুরুষ মানুষের পক্ষে একই সাথে পিতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা একজন মহিলার

মাতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা থেকে তুলনামূলকভাবে অনেকগুণ সহজ।


কিন্তু নবী বলতে যদি, এমন একজন ব্যক্তি বোঝান ন হয় যিনি আল্লাহর পছন্দের এবং। ২ যিনি পবিত্র ও ঘাঁটি ব্যক্তি, তবে সেখানে কিছু নারী রয়েছেন আমি এখানে উত্তম ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করব বিবি মরিয়মের (রা) নাম। এটি সূরা মরিয়মে উল্লেখ রয়েছে।


সূরা আলে ইমরানের ৪২ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে।


وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَئِكَةُ بِمَرْيَمُ إِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهِّرِكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَى نِسَاءِ الْعَلَمِينَ .

"যখন ফেরেশতা মারইয়ামকে বললেন, "যে আল্লাহ আপনাকে নির্বাচিত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং

বিশ্বজগতের নারীদের উপর নির্বাচিত করেছেন।" -সূরা আলে-ইমরানঃ ৪২


এখন আপনি যদি মনে করেন নবী হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি মনোনীত এবং পরিশুদ্ধও পরিত্রা, তবে আমরা বিবি মারইয়ামকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। যিনি ছিলেন ঈশা (আ)-এর মাতা যাকে অন্যরা যিশু বলেন। কুরআনে এমন নারীদের সম্পর্কে আরো উদাহরণ রয়েছে। যেমন সুরা তাহরীমে বলা হয়েছে-


وَضَرَبَ اللهُ مَثَلاً لِلَّذِينَ آمَنُوا امْرَاتَ فِرْعَونَ .


"আল্লাহ ইমানদারদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রী (আছিয়া)-এর অবস্থা বর্ণনা করছেন"। আল কুরআন তাহরীমঃ ১১


তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন-


إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِنْدَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ


العلمين .


"হে আমার প্রতিপালক। আমার জন্য বেহেশতের মধ্যে আপনার সন্নিকটে গৃহ নির্ধারণ করে দিন আর


আমাকে ফেরাউন এবং তার (কুফুরী) আচরণ থেকে হেফাযত করুন, আর সমস্ত অত্যাচারী লোকজন থেকেও

হেফাজত করুন।" -সূরা তাহরীম: ১১


চিন্তা করুন, আছিয়া ছিলেন তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সম্রাট ফেরাউনের স্ত্রী এবং তিনি আল্লাহর ভালবাসার জন্য স্বীয় সব আরাম-আয়েশ ও ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করতে চেয়েছেন।


উপরোক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে চারজন মহিলা নবী এসেছেন তারা হলেন, বিবি মারইয়াম (রা), বিবি আছিয়া (রা), বিবি ফাতেমা (রা) ও বিবি খাদিজা (রাঃ)। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

Comments